স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও আমার অভিজ্ঞতা

কদিন আগে আমার মায়ের ডাইরিয়া হয়েছিল। হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করতে হয়েছিল। আমাদের শহরের সুপার স্পেসালিটি হাসপাতালে (সরকারি) হাসপাতালেই ভর্তি করেছিলাম। সেখানে আমার বেশ কিছু জিনিস চোখে পড়েছিল যেগুলো সাধারণ মানুষ হিসাবে আমার মনে হয় উন্নতির প্রয়োজন আছে -

 

যখন জরুরি বিভাগে, রোগীকে ভর্তির জন্য নাম নথিভুক্ত করছিলাম, তখন একজন ডাক্তার কি হয়েছে , কি অসুবিধা ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করছিল। তারপর একজন নার্স নাম ঠিকানা নথিভুক্ত করল। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, এখানে রোগীকে অপেক্ষা না করিয়ে তাড়াতাড়ি রোগীকে ভর্তি করে, তৎক্ষণাৎ অন্তত তার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা উচিত। 

যাইহোক তারপর রোগীকে ৩ তলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, কিন্তু রোগী খুব দুর্বল ছিল, হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। স্ট্রেচারের ব্যবস্থা করা হল, কিন্তু ওরা বলল স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কেও নেই রোগীর বাড়ির লোককেই ঠেলে নিয়ে যেতে হবে। এটা তো অবাক ব্যবস্থা, আমার মনে হল কিছু লোক এই কাজে নিযুক্ত থাকা প্রয়োজন যারা স্ট্রেচার বা হুইলচেয়ার করে রোগীকে গন্থ্যবে পৌঁছে দেবে। 

তারপর তো ফিমেল ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল, সেখানে নার্সরা প্রেশার, সুগার টেস্ট করে একটা বেড দিল। কিন্তু ওখানে গিয়ে শুনলাম, ডাক্তার নাকি সকালেই রোগী দেখে চলে গিয়েছে , এখন কোনো ডাক্তারের ব্যবস্থা নেই; ওরা বলল এবার ডাক্তার আসবে সেই সন্ধ্যায়। এটা কিন্তু একটা খারাপ ব্যপার, আমরা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম প্রায় সকাল ১১ টাই এবার যদি রোগীকে সারাদিন এমন করে ফেলে রাখা হয় তাহলে তো অবস্থা গুরুতর হয়ে যেতে পারে। শুধু স্যালাইন দিলেই কি সমস্যার সমাধান হবে?

যাইহোক, অনেক অনুরোধ করে একজন ডাক্তারের ব্যবস্থা করা গেল। কর্তৃপক্ষ বলল যে , ওখানে একটা করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে তাই সব স্যানিটাইজ করে ডাক্তারের আসতে একটু সময় লাগবে। যাইহোক ডাক্তার শেষমেশ ঘণ্টাখানেক পরে এসে রোগীকে দেখে গেল। 

পরে সন্ধ্যায় ডাক্তার এসেছিল। দেখে গেছিল। পরের দিন রোগীর অবস্থা একটু উন্নত হতেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হল, আমি শুনলাম সরকারি হাসপাতালে নাকি এমনিই করে, ওরা রোগীকে একদিনের বেশি রাখতে চায় না; রোগীর অবস্থা একটু উন্নত হলেই ছেড়ে দেয়। যাইহোক আমাদের ক্ষেত্রে, রোগীর অবস্থা বেশ কিছুটা উন্নত হয়েছিল, আর ঘনঘন মলত্যাগ হয়নি। 

যাইহোক, এই হল আমার সরকারি হাসপাতালের প্রথম অভিজ্ঞতা। কিছুটা ভালো, কিছুটা খারাপ। তবে এই অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হল, যদি সম্ভব হয় তাহলে গুরুতর রোগীকে পুরুলিয়ার কোনো বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি করা গেলে ভালো হয়। কিন্তু যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কাজ চালাবার জন্যে আমাদের রঘুনাথপুর সুপারস্পেসালিটি হাসপাতাল ঠিকই আছে; অন্তত আমার তাই মনে হয়। 

শুধু ঝা-চকচকে রাখলেই হয়না, স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির উন্নতির খুব প্রয়োজন। এইসব দেখে মনে হয়, কোনো Dystopian পৃথিবীর স্বাস্থ্যব্যবস্থা। 

সমাজের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাইরে থেকেই দেখতে ভালো / ভেতর থেকে একেবারে ভঙ্গুর

~ পলাশ বাউরি

✏️ শেষ সম্পাদনাঃ বুধ, 25 জানুয়ারি 2023 | 📎 লিঙ্ক
এক লেখাটি সম্পর্কে কোনো মতামত আছে 🤔? তাহলে আমাকে ইমেল পাঠান (নীচে দেওয়া আছে) কিংবা টুইটারে বা ফেসবুকে আমাকে @bauripalash মেনশন করে পোস্ট করুন 😺!

আমার লেখাগুলো বা অন্যকোনো কাজ ভালো লাগছে? তাহলে এক কাপ চা খাওয়ান

আরও পড়ুন