জাতীয় সংগীত ও জাতীয় গান
বেশকিছুদিন আগে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে হতে হঠাৎ চোখে পড়ল আমার প্রাক্তন হাই স্কুলের ফেসবুক পেজটির একটি পোস্ট। পোস্টটি ছিল একটি কবিতা, সেই কবিতাটি লিখেছেন আমাদের বিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষিকা। কাব্যিক চুলচেরা বিশ্লেষণ আমি করতে চাই না, তবে সাধারণ মানুষের চোখে বেশ ভালোই লাগবে কবিতাটি। তবে কবিতাটির ষষ্ঠ লাইনেই একটি ত্রুটি চোখে পড়ে আমার - সেখানে বলা হচ্ছে, স্কুলের প্রার্থনাতে নাকি ‘জাতীয় গান’ গাওয়া হয়!
[তবে আমি আগেই বলে রাখতে চাই, ওই শিক্ষিকার ত্রুটি ধরে আমি নিজেকে মহান বা জ্ঞানী প্রতিপন্ন করতে চাই না। আমার উদ্দেশ্য খুব সরল - কাব্যকে ত্রুটিহীন করা। ]
প্রথম দেখাতে অনেকরই মনে হতে পারে, ঠিকই তো স্কুলের প্রার্থনাতে
জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় এটাতে ভুল কোথায়। এবার বলে রাখি - আমাদের দেশের জাতীয়
সংগীত ও জাতীয় গান কিন্তু আলাদা আলদা। সঙ্গীত ও গান শব্দদুটি সমার্থক অর্থে
ব্যবহার করা হলেও আমাদের জাতীয় সংগীত ও জাতীয় গান কিন্তু আলাদা আলাদা!
ইংরেজি প্রতিশব্দ দেখলেও ব্যপারটা পরিষ্কার বোঝা যাবে। জাতীয় সংগীত এর
ইংরাজি প্রতিশব্দ হল National anthem অন্যদিকে জাতীয় গান এর ইংরাজি প্রতিশব্দ হল National song।
প্রথমে আগে চলো সংজ্ঞাটা বুঝেনি - জাতীয় সংগীত হল এমন
একটি সংগীত রচনা যা স্বভাবে দেশপ্রেমী হয় এবং যা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য,
সংগ্রাম প্রতিফলিত করে। এই মূলত কোনো দেশের সরকার বা জনগণ দ্বারা স্বীকৃত ও
গৃহীত হয়। অন্যদিকে জাতীয় গান হল একটি দেশপ্রেমিক স্তবগান যা কোন দেশের সরকার দ্বারা
সাধারণ বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে গাওয়ার জন্য গৃহীত
হয়।
ভারতবর্ষের সংবিধান অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত
“জন-গন-মন” বাংলা গানের হিন্দি সংস্করণটি হল ভারতের জাতীয় সংগীত বা
National Anthem। অন্যদিকে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত “বন্দেমাতরম”
হল ভারতবর্ষের জাতীয় গান বা National Song।
এবার তাহলে বুঝতে আর কোনো অসুবিধা থাকে না, ওই কবিতাটিতে ঠিক কী ভুল ছিল। আমাদের দেশের অনেক সাধারণ ও শিক্ষিত জনগণই জাতীয় সংগীত ও জাতীয় গানের মধ্যে পার্থক্য বোঝে না, তাই এইসব ভুল ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
আমি যদিও ওই পোস্টে কমেন্ট করে , তথ্যসূত্র দিয়ে ভুল ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে তার কোনো প্রত্যুত্তরে কোনো রিপ্লাই পাইনি। তিনি হয়তো আমার রিপ্লাই দেখেননি কিংবা তিনি ভুল স্বীকার করতে রাজি নন। 🤷♂️
আসলে নয় কিছুই ভ্রান্তিকর / শুধু অভাব সম্যক জ্ঞানের
~ পলাশ বাউরি