দাবি

আমরা কদিন আগে খবরের পাতায় দেখেছি, সোফিয়া নামক এক রোবট সৌদি আরবের নাগরিকত্ব লাভ করে। সাথে সাথে প্রথম অমানব যন্ত্র হিসাবে জাতিপুঞ্জের উন্নয়ন প্রোগ্রামের নতুনত্বে বিজয়ী সম্মাননা পায়। সোফিয়া হল এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত উন্নত মানের রোবট। সে মানুষের মত অনেক কিছুই করতে পারে, যেমন মানুষের মত অঙ্গভঙ্গি করা, মুখের অভিব্যক্তি নকল করা ইত্যাদি। এছাড়া সে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর কথোকপথনও চালিয়ে যেতে পারে। 

অর্থাৎ এর থেকে বোঝা যাছে যে , সেদিন দূর নয় যখন সোফিয়ার থেকেও উন্নত রোবট আমাদের মাঝেই থাকবে। তাহলে যদি মানুষের সমগুণ বিশিষ্ট সমকক্ষ মেশিন বা রোবট তৈরি হয় তাহলে কী হবে? তারা কি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে যেমনটা অনেক গল্পে বা সিনেমাতে দেখা যায়। নাকি তারা আমাদের পাশাপাশি থেকে সমাজে জীবনধারণ করতে চাইবে। সেদিনটা এলে ঠিক কী ঘটবে তার সঠিক ধারনা আমাদের নেই তবে সেদিন আসার আগেই আমারা একটা জিনিস করতে পারি সেটা হলো সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা। 

কোনোদিন যদি এমন দিন আসে যে , মানসিক ও শারীরিক উভয় দিকেই সমতুল্য মেশিনের জন্ম হল তাহলে , প্রথম যেটি ঘটবে আমার মতে, সেটি হল তারা অধিকার চাইবে। নাঃ আমার মনে হয়না তারা জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের শত্রু হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে, যদিনা তাদের কোনো কু-উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। তাদের চিন্তাভাবনাও যদি মানুষের মতই হয়, তাহলে তারা চাইবে সমাজে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। যদি তারা অন্যান্য প্রাণীর মতই প্রজনন করার ক্ষমতা রাখে তাহলে তারা চাইবে, তাদের সন্তানসন্ততিদের জন্য সুস্থ সামজিক পরিবেশ ও জীবনযাপন। 

তবে , সরকারের কাছে অধিকারগ্রহণ খুব একটা কঠিন না হলেও কঠিন হবে সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে সেই অধিকারের প্রভাব বিস্তার করা। শুনতে খারাপ লাগলেও , বর্তমান সময়ে মেশিনরা শুধুমাত্র আমাদের কাছে দাস। আমরা যা কমান্ড করি, তারা সেই কমান্ড অক্ষরে অক্ষরে নির্ভুলভাবে পালন করে। সাধারণ মানুষ কী মেশিনদের নিজেদের সমকক্ষ বলে মেনে নিতে সক্ষম হবে? নাকি আবার বিশ্বজুড়ে জ্বলে উঠবে অধিকার আদায়ের সংগ্রামের আগুন? 

তবে অধিকার/আইন প্রণেতাদের একটা বিশাল বড় সমস্যার সৃষ্টি হবে - অধিকারটা ঠিক কাদের জন্য? শুধু মানবাকৃতি রোবটদের জন্য , নাকি সব রোবটদের জন্য , শুধু রোবটদের জন্যই নাকি সব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত মেশিনদের জন্য? নাকি সব মেশিনদের জন্য?

সব মেশিনকেই অধিকার দিয়ে দিলে তো আমাদের রান্নাঘরে রাখা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত ফ্রিজটাও তো অধিকার দাবি করবে , কিম্বা আমার হাতের হাতঘড়িটাও অধিকার দাবি করবে! আর তাদের দাবি ঠিকমত না মানা হলে তারা তো আবার ধর্মঘটেরও ডাক দিতে পারে। তাহলে কাজ চলবে কি করে? তাহলে কি আমরা ফিরে যাব সেই মেশিনহীন প্রগৈতিহাসিক যুগে ? এটাতো মানুষ কিছুতেই মেনে নেবে না, এভাবেই কি শুরু হবে, মানুষ বনাম যন্ত্রের ঐতিহাসিক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ?

না না , চিন্তার কোনো কারণ নেই, এসব কিছুই ঘটবে না। তবে না ঘটার জন্যে আমাদের যা করতে হবে তা হল কতকগুলি মানদণ্ডের তৈরি করতে হবে, কোনো মেশিন যদি সেই মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয় তবেই সে মানুষের সমান অধিকারের দাবিদার হবে। সেরকম কয়েকটি মানদণ্ড হতে পারে - 

+ নিজস্ব স্বতন্ত্র চিন্তাশক্তি থাকতে হবে।

+ চেতনা জ্ঞান থাকতে হবে।

+ চলন ও গমনে সক্ষম হতে হবে। 

+ দৃষ্টি , শ্রবন , কথা বলাতে সক্ষম হতে হবে। 

এগুলি হল কিছু প্রাথমিক গুন , যেগুলি থাকা আবশ্যিক। তবে এছাড়াও আরও কিছু গুন থাকা প্রয়োজন, মূলত সেগুলিই আমাদের মানুষদের মানুষ হতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে আমাদের দুটি বিষয়ের অনেক সাহায্যের প্রয়োজন হবে - দর্শন ও আইন। 

মানব ইতিহাসের পাতায় পাতায় আমরা পড়েছি , শ্রমিক কৃষক ও নিচু সমাজের মানুষদের বারবার সংগ্রাম , বিদ্রোহ করতে হয়েছে নিজেদের ন্যায্য অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য। যন্ত্রদেরও কি একই রাস্তায় হাঁটতে হবে কি না , তা আমার জানা নেই। তবে যেহেতু আমরা ইতিহাসে বারবার লক্ষ্য করেছি , বিদ্রোহে বা সংগ্রামে বারবার রক্তক্ষরণ হয়েছে তা সে যে পক্ষেরই হোক না কেনো; তাই যন্ত্ররা অধিকার দাবি করলে আমাদের উচিত হবে শান্তির পথ ধরে আগ্রসর হওয়া এবং আমাদের নতুন প্রতিবেশীদের উষ্ণ অভিনন্দন জানানো! 

 

তবে আমাদের কিছু অসুবিধারও সম্মুখীন হতে হবে , সেগুলোও মাথায় রাখতে হবে - মানুষ যেভাবে যে হারে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছে তাতে তাতে মানুষের নিজেরই বাসস্থানের অভাব হচ্ছে। সেই অভাব পূরণের জন্য আমরা নির্মমভাবে হত্যা করে চলেছি সবুজ বনজঙ্গলকে। মানুষের সাথে মানুষের মতোই আরেকটি সম্প্রদায় যদি পৃথিবীতে শীঘ্রই বাসস্থানের অভাব দেখা যাবে , সেক্ষেত্র আমাদের অন্য গ্রহে থাকার কথাও ভাবতে হতে পারে। তাছাড়া যাতে এসব ঝুটঝামেলার মধ্যে পরিবেশের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। 

আশা করি, ভবিষ্যতে যাতে মানুষ ও যন্ত্ররা একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক সুন্দর সুখী পৃথিবীর জন্ম দিতে পারে এবং তাকে টিকিয়ে রাখতে পারে। 

[সমস্ত ছবি FreePik থেকে নেওয়া] হাতে হাত ধরো বন্ধু / হতে পারো মানুষ কিম্বা রোবট / হাতে হাত ধরো বন্ধু / সুস্থ পৃথিবীর লক্ষ্যে
~ পলাশ বাউরি

✏️ শেষ সম্পাদনাঃ বুধ, 25 জানুয়ারি 2023 | 📎 লিঙ্ক
এক লেখাটি সম্পর্কে কোনো মতামত আছে 🤔? তাহলে আমাকে ইমেল পাঠান (নীচে দেওয়া আছে) কিংবা টুইটারে বা ফেসবুকে আমাকে @bauripalash মেনশন করে পোস্ট করুন 😺!

আমার লেখাগুলো বা অন্যকোনো কাজ ভালো লাগছে? তাহলে এক কাপ চা খাওয়ান

আরও পড়ুন