আরেক রবিবার

২৮ ডিসেম্বর , ২০২০

অনেক কবিকেই বলতে শুনেছি , কবিদের শব্দ স্টক থাকা মাস্ট । আলবাত শব্দ স্টক থাকলে কাব্য রচনার সময় জটিল ভাব ফুটিয়ে তুলবে , বা কিছু একাধিক শব্দ যুক্ত অর্থ কে একই অর্থ রেখে শব্দের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায় কিন্তু সেটাকে অপরিহার্য করে তোলা উচিত বলে আমার মনে হয়না। এতে যেমন নবীন কবিদের জন্য নৈরাশ্য সৃষ্টি করা হয় তেমনি সাধারণ পাঠকদের কাছে কাব্যের প্রাঞ্জল্যতা হারায়।

আমার মতে কাব্য এমন হওয়া উচিত যার মধ্যে গভীরতা থাকবে , বিভিন্ন দৃশ্যমান ও অদৃশ্য স্তর থাকবে সাথে হয়তো গোপন অর্থও থাকবে।  যেগুলি পাঠককে ভাবতে বাধ্য করবে কিন্তু তার সাথে সাথে তা প্রাঞ্জল হবে , বোধগম্য হবে , যাতে করে পাঠক কাব্যের কিছু অন্তত বুঝতে পারে।

এছাড়া আজকালের কাব্যে আমি সবথেকে বেশি যেটা আমি অনুপস্থিত মনে করি সেটা হল , অভিনবত্ব। ক্লাসিক কবিদের কাব্যে সবথেকে একটা জিনিস বেশি লক্ষ্য করা যায় সেটা হল , লেখার ভিন্ন ভিন্ন ধরন, বিভিন্ন স্টাইল। কই আজকালকার কবিদের এসব তো বেশি চোখে পড়ে না (তবে ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে), এর মুল কারণ হতে পারে কবিদের অলসতা , তাদের কাছে কবিতা লেখা খুব সহজ - এক বসাতেই শব্দের পর শব্দ বসিয়ে দিলাম , সাথে হয়তো অবিধান বের করে দুএকটা কঠিন কঠিন সাত জন্মে শুনিনি এমন শব্দ বসিয়ে দিলাম, ব্যাস হয়ে গেলো কবিতা । তারপর আর কি , ব্লগে বা ফেসবুকে সেঁটে দিলাম , হাজার হাজার লাইক , কমেন্ট , শেয়ার আসতে আসতে শুরু করল (আসবে নাই বা কেন , বাবু/বাবি আগে থেকেই তো পাঁচ হাজার ফ্রেন্ড ফলোয়ার নিয়ে বসে আছে যে) ।

আমি আজকালের অনেক তথাকথিত কবি সাহিত্যিকদের কবিতা পড়েছি; তবে আমার , একজন নবীন পাঠকের কাছে তার বিন্দুমাত্রও মস্তিষ্কগাহ্য হয়নি। সেটা পাঠক হিসাবে আমার বিফলতা নাকি কবির বিফলতা তা আমার জানা নেই। অর্থের কথা যদি বাদই দি; লালিত্য, ছন্দ, উপভগ্যতা এসবের কণা মাত্র খুঁজে পাইনি এইসব তথাকথিত আধুনিক কবিদের কাব্যে।

যাইহোক কাল রাতে , আমার এক বন্ধুর সাথে এইসব নানান ব্যপারে গল্প হচ্ছিল তখন সে হঠাৎ একটা প্রশ্ন করল যে , আচ্ছা আমাদের গ্রামার বই বলে যে “সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয়, পশ্চিম থেকে অস্ত যায়” এটা চিরন্তন সত্য বাক্য কিন্তু আমরা তো বিজ্ঞান থেকে জানি যে , সূর্য উদিত হয়না আবার অস্তও যায় না। প্রথমে আমারও অনেকের মতোই মনে হয়েছিল , হয়তো সূর্যের প্রতিচ্ছবি কে আমরা উদিত হতে দেখি আবার অস্ত যেতেও দেখি এটাকেই হইত সাহিত্যে ধরা হয়েছে। কিন্তু তবুও তো আমরা হাজার বছর পুরনো একটা ধারনা কে চিরন্তন সত্য বলে চালিয়ে দিতে পারিনা। তবে পরক্ষণেই আসল ব্যপারটা মনে হল ধরতে পেরেছি - কোপারনিকাস-গালিলিওর আগে থেকেই তো সাহিত্য বর্তমান, তখন তো মানুষ মনে করত যে , সূর্যই পৃথিবীর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে , তারই প্রতিচ্ছবি পড়েছে সাহিত্যে , ব্যকরনেও । বিজ্ঞান যেমন নমনীয় বা ফ্লেক্সিবেল , সাহিত্য হয়তো সেরকম নয় । পৃথিবীই যে সূর্যের দিকে চারদিকে ঘোরে এটা সর্বজনসিদ্ধ হওয়ার পরেই আমরা শীঘ্রই বিজ্ঞানের বইগুলি তো আপডেট করে দিয়েছি কিন্তু সাহিত্য ও ব্যকরনের বইগুলি আর আপডেট করা হয়নি , যার ফলস্বরূপ “সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয়, পশ্চিম থেকে অস্ত যায়” এখনও চিরন্তন সত্য বাক্য।

অদূর ভবিষ্যতে হয়তো , আমরা সাহিত্য ও ব্যকরনের বইগুলিও আপডেট করতে সক্ষম হবো।

কবি তোমার কবিতা / যেন রামধনুর চিতা।

~ পলাশ বাউরি

✏️ শেষ সম্পাদনাঃ বুধ, 25 জানুয়ারি 2023 | 📎 লিঙ্ক
এক লেখাটি সম্পর্কে কোনো মতামত আছে 🤔? তাহলে আমাকে ইমেল পাঠান (নীচে দেওয়া আছে) কিংবা টুইটারে বা ফেসবুকে আমাকে @bauripalash মেনশন করে পোস্ট করুন 😺!

আমার লেখাগুলো বা অন্যকোনো কাজ ভালো লাগছে? তাহলে এক কাপ চা খাওয়ান