সমাজ সংস্থার পতন
আমি কদিন আগে " সমাজ সংস্থার প্যরাসাইট " তে লিখেছিলাম বর্তমান সমাজ সংস্থার পতন অবশ্যম্ভাবী। সেই লেখা কিন্তু আমি অনেক কিছুই উহ্য রেখেছিলাম তাই মনে করলাম কিছু বিষয় আরও পরিষ্কার করার প্রয়োজন।
সর্বপ্রথম যেটা পরিষ্কার করা প্রয়োজনীয়, সেটা হলো সমাজ সংস্থা বলতে আমি কি বুঝিয়েছি। তবে সেটা বোঝার আগে আমাদের বুঝে নেওয়া উচিত সমাজ কাকে বলে। আমার মতে, সমাজ হল কয়েকটি পরস্পর নির্ভরশীল মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ, নিয়মবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠী। আবার বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্কলিন গিডিংসের মতে, “সমাজ বলতে সেই সঙ্ঘবদ্ধ মানবগোষ্ঠীকে বোঝায় যারা কোন সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মিলিত হয়েছে”।
আবার এই কোন সমাজে অন্তর্ভুক্ত থাকা মানুষজন বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ লিখিত বা অলিখিত নিয়ম নীতি মেনে চলেন। সেই নিয়মনীতি সম্বলিত জীবনধারণের যে পথ ধরে চলেন সেই পথসমষ্টির জালকেই সমাজ সংস্থা বলে। সহজ কথায় বলতে, সমাজে জীবনধারণের যে তন্ত্র বা শৃঙ্খলা বর্তমান তাকেই সমাজ সংস্থা বলে।
সমাজ স্থায়ী কিন্তু সদা পরিবর্তনশীল। চিন্তা-ভাবনা, শিক্ষা, বিজ্ঞান হল সমাজের অগ্রগতি ওরফে পরিবর্তনের মুল অনুঘটক। যদিও এইসব পরিবর্তন সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে না। তবে আমার অনুমান, সমাজে এমন একটা আমূল পরিবর্তন শীঘ্রই আসবে যা সমাজের স্তম্ভগুলিকে ধ্বংস করে দেবে।
তবে একটা “শীঘ্রই” মানে এমনটা নয় যে, তুমি আজ রাতে শোবে আর কালকে উঠেই দেখবে যে সমাজ সংস্থার পতন ঘটে গেছে এবং চারিদিকে একেবারে হাহাকার অবস্থা! আমি যে পরিবর্তন ও ধ্বংসের অনুমান করছি, সেটি আসতে সঠিক কত সময় লাগবে তার অনুমান করা এক প্রায় অসম্ভব কাজ, কারণ এই পরিবর্তনের হার সর্বদা পরিবর্তনশীল। বর্তমান শতককে যদি প্রাক-পরিবর্তনের সময়কাল ধরি তবে অনুমান করা যেতেই পারে আগত শতকই এই পতনের মুখে প্রথম ধাপ হবে।
আমার মতে এই পূর্বতন সমাজ থেকে নতুন সমাজের গঠন হবে মোট পাঁচটি পর্যায়ে। আমরা যদি পর্যায়গুলিকে ‘ক’ , ‘খ’ , ‘গ’ , ‘ঘ’ , ‘ঙ’ নাম দি তাহলে ব্যপারটা দাঁড়াবে কিছুটা নিম্নরূপ -
‘ক’ পর্যায়টি হবে, প্রাক-পরিবর্তন যুগ। এই সময় সমাজের পরিবর্তন বা ধ্বংসের প্রস্তুতি চলবে। মানুষের মনে এইসময় ধ্বংস বা পরিবর্তনের বিন্দুমাত্র আভাস থাকবে। এই স্তর একেবারে নিস্তব্ধ।
‘খ’ পর্যায়টি, পরিবর্তনের প্রথম ধাপ। এই সময় সমাজের ছোট ছোট পরিবর্তন আসবে। মানুষ এবার আস্তে আস্তে চারপাশে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনকে আনুধাবন করতে পারবে, যদিও আমূল পরিবর্তন যে আসন্ন সেটা গুটিকতক মানুষ ছাড়া কেউই বুঝতে পারবে না।
‘গ’ পর্যায় হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়। এই সময় পরিবর্তনও গতিশীল থাকবে আবার পূর্বতন সমাজের অগ্রগতিও চলমান থাকবে। মানুষ এইসময় নতুনকেও সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতেও দ্বিধাবোধ করবে, আবার পুরানোকেও একেবারে ছেড়ে দিতেও পারবে না। এইসময় সূচনা হবে বিভিন্ন দ্বন্দ্বের ও খামতির যা পরবর্তী সমাজকে দুর্বল করার কাজ করবে। সমাজ যে এবার পরিবর্তনমুখি তা এবার মানুষ সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারবে।
‘ঘ’ পর্যায় হল আকস্মিক ও আমূল পরিবর্তনের যুগ। এইসময় পরিবর্তনের বেগ সর্বোচ্চ থাকবে। এইসময় সমাজের আমূল পরিবর্তন আসবে এবং তা সমাজের সব স্তরের মানুষকেই প্রভাবিত করবে। মানুষের জীবনধারণের প্রণালি, দৃষ্টিভঙ্গির প্রচুর পরিবর্তন আসবে।
‘ঙ’ পর্যায় হল পরিবর্তনের শেষ পর্যায়। এতদিন যেসব রক্ষণশীল মানুষ পুরানো সমাজ সংস্থাকে আঁকড়ে ছিল তারাও এবার নবমুখি হবে এবং আস্তে আস্তে পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে বাধ্য হবে; এর সাথেই পূর্বতন সমাজের শেষ চিহ্নও নিশ্চিহ্ন হবে। এই পর্যায় কিছুটা ভোরের মতো।
নতুন সমাজ থেকে বর্তমান সমাজের থেকে সর্বোত্তম হবে, এমন ধারনা রাখা উচিত নয়; আবার আগত নতুন সমাজই যে শেষ সমাজ এমন নয়, পুরানো সমাজের কিছু প্যরাসাইট নতুন সমাজেও বর্তমান থাকেবে তাছাড়া উপরোক্ত পাঁচটি পর্যায়ে শিশু সমাজের বীজ যখন অঙ্কুরিত হবে ঠিক সেইসময় কিছু কিছু খামতি বা ত্রুটি তার মধ্যে থাকবেই, যা পরবর্তী সমাজের আগমনকে সুনিশ্চিত করবে।
আজকে শুধুই নতুন সমাজ কিভাবে ধাপে ধাপে গঠিত হবে তা নিয়ে আলোচনা করলাম। কিছুদিন পর বর্তমান সমাজের পতনের কারণগুলি আলোচনা করবো।
[রঙিন ছবিগুলি Freepik থেকে নেওয়া]
সমাজ স্তরে স্তরে রক্তাত্ত হবে একদিন / নবসমাজের বীজ অঙ্কুরিত হবে সেই রক্তেই
~ পলাশ বাউরি