সমাজ সংস্থার প্যারাসাইট
আমি যখন এই লগব্লগটি লেখা শুরু করেছিলাম। আমার মাথায় তখন অনেক উদ্দেশ্য ছিল যেমন ধরো - আমাদের চারপাশে হাজার রকমের সমস্যা জমা হয়ে আছে, কিন্তু আমরা যে কটি সমস্যার কথা জানি , শুনেছি বা দেখতে পাই তার থেকে অনেক বেশি সমস্যা আছে এই সমাজ সংস্থার মধ্যে লুক্কায়িত হয়ে যাদের অস্তিত্ব খুব কম লোকেই অনুভব করতে পারে, আর এদের নিয়ে কথাও খুব কম লোকেই বলে , আর তাই এদের সমাধান আর খুব একটা খোঁজা হয়না। অনাদিকে বেশিরভাগ উন্মুক্ত সমস্যার সমাধান আমরা জানি , কিন্তু অনেক ব্যাক্তিগত বা আর্থ-সামাজিক কারণে সে সমস্যার সমাধান আর প্রয়োগ করা হয়ে ওঠেনা।
কিন্তু আমি এখানে যে ধরনের সমস্যার কথা বলছি, সেগুলি আমাদের সমাজ সংস্থার (System) মধ্যে একেবারে গভীরে লুক্কায়িত হয়ে আছে - একেবারে সমাজের ভিতের খুঁটিগুলিকে পরগাছার মত জড়িয়ে আছে - এতদিন ধরে সমাজের খুঁটিগুলিকে কুরে কুরে খেয়েছে এই পরগাছাগুলি এবং শেষমেষ সমাজের খুঁটির অংশে পরিণত হয়েছে। তাই এতবছর পর খালি চোখে মানুষের পক্ষে আর বোঝা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে কোনখান থেকে ঠিক খুঁটি শুরু হয়েছে আর কোনখান থেকে পরজীবীর শুরু। এককথায় বলতে গেলে এই পরজীবীগুলিই এখন সমাজের অঙ্গ হয়ে উঠেছে এবং আমরা সমাজ বলতে যেটাকে বুঝি তাকে অক্ষত রেখে এদের সমূলে উপড়ে ফেলা এখন আর কোনমতেই সম্ভব নয়।
আমাদের কাছে একমাত্র পথ খোলা আছে সেটি হল, সমাজ সংস্থার কাঠামোকে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে তৈরি করা। আজ যদি তা নাও করা হয় , ভবিষ্যতে তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। যেহেতু দিন দিন সমাজের ভিতের পরগাছাগুলি আরও হিস্টপুস্ট হচ্ছে এবং একসময় এমন দিন আসবেই যখন সমাজের খুঁটিগুলি একেবারে দুর্বল হয়ে উঠবে; তখন মানব জীবনের প্রবাহকে অক্ষত রাখার জন্য সমাজ সংস্থার পুনর্গঠন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে।
নতুন সমাজের গঠনের সময় সাবধান হওয়া প্রয়োজনীয় নাহলে, পূর্বতন পরগাছার বীজ সেই সমাজে আবার সুপ্ত অবস্থায় থেকে যাবে; এবং সেই সমাজেরও অবস্থা হবে পূর্ববর্তী সভ্যতার সমাজ সংস্থার মতো। নতুন সমাজ গঠনে আমাদের পাথেয় করতে হবে দর্শন , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অন্যথা সমাজ সৃষ্টি বৃথা; নাহলে নতুন সমাজ ও পুরানো সমাজের মধ্যে আর কোনো পার্থক্যই থাকবে না।
আজ সংজ্ঞাতেই সমাপ্ত করলাম। আমি প্রত্যকদিন চেষ্টা করব এইরকম প্যারাসাইট সমস্যাসমূহকে খুঁজে বের করার এবং তাদের সমাধান খুঁজে বের করার। আমার এইসব লেখা আজ যদি কেও নাও পড়ে তবু আমি কোনভাবেই নিরাশ হবো না, আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নিজেকে বা নিজের লেখাকে পপুলার করা নয় বরং নতুন সমাজ গঠনের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হয়ে ওঠা, যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আনুধাবন করতে পারে যে পূর্বতন সমাজ সংস্থায় কী ধরনের সুপ্ত সমস্যা ছিল এবং সঠিক পন্থা অবলম্বন গ্রহণ করতে পারে যাতে সেইসব সমস্যার বীজ সেই নতুন সমাজে যেমন না থাকে।
রুগ্ন সমাজ আজ ধুঁকে / প্যারাসাইট বুকে নিয়ে / নব সমাজের সূর্য উঠবেই একদিন/ সেদিন দেখব নতুন সূর্য ভোর।
~ পলাশ বাউরি