নেতাজির সাথে কয়েকমুহূর্ত
কাল ছিল মহান বিপ্লবী ও দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বেশ জমজমাট অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন অনেক বিশিষ্টজন সাথে ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল। এদিন নেতাজির পত্রাবলি সম্বলিত একটা গ্রন্থও প্রকাশ পেল। সাথে একটি অভিনব প্রোজেক্টর শো এর আয়োজন করা হয় - ভিক্টোরিয়া সাদা দেওয়ালগুলিকে পর্দা বানিয়ে নেতাজির জীবনের বিভিন্ন ঘটনা ফুটিয়ে তোলা হয় আলোর খেলার মাধ্যমে।
যদিও সব ঠিক ছিল প্রথমদিকে কিন্তু একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, কিছুক্ষণের জন্য সব মাটি করে দেয়। এটি ছিল একটি সরকারি অনুষ্ঠান এবং এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সমস্ত অতিথিগন কিন্তু কোনো রাজনীতিক দলের প্রতিনিধি নন । কোনো প্রতিনিধিকেই অপমান করা অর্থাৎ আমাদের নিজেদেরই অসম্মান।
যাইহোক, কাল কল্পনাপাড়ার অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে দেখা দেখা পেয়ে গেলাম নেতাজির। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম, তবে তিনি আগেই বলেছিলেন যে তার অন্তর্ধান রহস্য সম্পর্কিত কোনো কথা না হলেই ভালো হয়; আমিও রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। শেষে যখন জিজ্ঞেস করলাম আমাদের কথোপকথনের লিপি কি আমার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারি , প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও , পরে রাজি হয়ে গেলেন।
এখানে কল্পনাপাড়ায় আমাদের কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে দিলাম -
আমিঃ দেশকে মনে পড়ে?
সুভাষ বাবুঃ প্রথমে দিকে খুব মনে পড়ত, তবে এখন সয়ে গেছে। আমিঃ দেশের কোন ঘটনা আপনাকে সবচেয়ে বেশি দুঃখ দিয়েছে এবং কোন ঘটনা সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছে?
সুভাষ বাবুঃ দেশভাগ সবচেয়ে বেশি দুঃখ দিয়েছে। আর আনন্দ দিয়েছে অনেক ঘটনা যেমন ধরো যখন ভারত যখন পারমানবিক শক্তিধর দেশ হিসাবে স্বীকৃত হল আবার যখন আমদের মঙ্গলযান প্রথম চেষ্টাতেই মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাতে সক্ষম হল; এছাড়া অনেক কিছুই আছে। আমিঃ ভারতের স্বাধীনতা অর্জন সম্বন্ধে কী বলবেন?
সুভাষ বাবুঃ আরে ওটাকে স্বাধীনতা বলো কিকরে তোমরা! ভারতবাসী আসলে স্বাধীনতা অর্জন করেনি, ইংরেজরাই ভারতকে বর্জন করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ড পুরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল, আর ওদের দখল করে রাখা অত দেশগুলো আর জন্য লাভজনক ছিল না তাই ওরা ভারতকে ছেড়ে চলে গেছিলো। সহজ কথায় বলতে, ভারতকে শোষণ করার মত আর কিছু ছিল না তাছাড়া আজাদ হিন্দ বাহিনী ও অন্যান্য সশস্ত্র বিপ্লবের ফলে জনগণের মনে ওদের তৈরি করা আইন শৃঙ্খলার ভ্রমও আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের স্বাধীনতার রূপ যে এত বীভৎস হবে আমি কোনোদিন কল্পনাও করতে পারি না।
আমিঃ বর্তমান যুব সমাজ সম্পর্কে আপনার কী মতামত?
সুভাষ বাবুঃ আমি কিন্তু সত্যিই ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব শঙ্কিত। বর্তমান যুব সমাজ যেভাবে প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে তা কল্পনাতীত। তাছাড়া আজকাল তো বইপত্র তো কেও পড়তেই চাই না, ওরা বোঝা না যে বই পড়ে যেভাবে জ্ঞান আহরণ করা যায়, তোমাদের ওই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে তা মোটেই সম্ভব নয়। সবাই আসক্ত হয়ে গেছে। তাছাড়া আমি তো মাঝে মাঝে ভেবে শঙ্কিত হয়ে যায় যে, তোমাদের যুবসমাজের দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একেবারেই ভাবে না।
আমিঃ আচ্ছা, আপনি যে ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং এখন যে ভারতবর্ষের সৃষ্টি হয়েছে, তা কি এক নাকি ভিন্ন
**সুভাষ বাবুঃ ** আমি ও সেইসময়ের প্রায় প্রত্যকটি ভারতীয় যেমন স্বাধীন ভারতের কল্পনা করেছিলাম, তার রূপ বর্তমান ভারত থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন। আমাদের স্বপ্নের ভারতে দেশভাগ ছিল না, বরং ছিল এক অখণ্ড সম্মিলিত ভারতবর্ষ। আমাদের স্বপ্নের ভারতে জাতিবিদ্বেষ , হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছিল না। বর্তমান ভারতকে দেখলে আমার খুবই কষ্ট হয়। আমিঃ আজকের মত শেষ প্রশ্ন - আপনি তো চিরকালই বিশ্বাস করেছেন, দেশের ভাগ্য বদল করতে পারে একমাত্র ছাত্র যুব সমাজ তাই বর্তমান যুবসমাজের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
**সুভাষ বাবুঃ ** ছাত্র যুবসমাজের উদ্দেশ্যে বলব - প্রথমত নিজের পড়াশুনাতে মন দাও মূলত শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য সারাজীবন কর্পোরেট চাকরির দাসত্ব করার জন্য নয়। তাছাড়া আমাদের দেশের ইতিহাসকে জানো। টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমের কারাগার থেকে বেরিয়ে এসো। সঠিক আদর্শ চিনতে শেখো। আমাদের দেশের বিভিন্ন জ্ঞানী ও মনিষীদের জীবন ও কাজ সম্পর্কে পড়। নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করো যাতে দেশের ভবিষ্যৎকে নিজের হাতে গড়তে পারবে। যাইহোক আজ নেতাজির সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটালাম। সেই কথোপকথনের প্রতিলিপি তুলে দিলাম এখানে। যদিও সবথেকে বেশি জানার ইচ্ছা ছিল, ১৯৪৫ সালে তাইহোকুতে ঠিক হয়েছিল; যাইহোক আর ওই কথা তুলতে সাহস পেলাম না।
নেতাজি তুমি কেমন আছো জানতে ইচ্ছে করে / কেমন করে মৃত্যুকে হারালে শুধাতে ইচ্ছে করে
~ পলাশ বাউরি