রাজনৈতিক ছুটি
কালকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী একটি খবরের চ্যানেলে একটি সংক্ষিপ্ত ফোনালাপে ঘোষণা করলেন কাল থেকে অর্থাৎ আজ থেকে দার্জিলিং ও কালিংপং জেলা বাদে অন্যান্য সব জেলার সরকারি স্কুল কলেজ এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে, তাপপ্রবাহের জন্য নাকি এই ছুটি দেওয়া হল সরকারি নোটিফিকেশন অনুযায়ী “Prevailing heat wave situtation”। নোটিফিকেশনে আরও একটি ইন্টারেস্টিং জিনিস লেখা আছে
“Considering the prevailing heat wave situation, the competent authority has decided to close all Autonomous/State/Central Government Aided, Sponsored, Private Schools in the State of West Bengal, with effect from 17‘ April, 2023 for one week or until further order which ever is earlier, except for the schools in hill areas of Darjeeling and Kalimpong districts, where in existing academic schedule will continue.”
এখানে সবথেকে বেশি ইন্টারেস্টিং লাইন হল from 17‘ April, 2023 for one week or until further order which ever is earlier
=>
until further order which ever is earlier। অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহ কিংবা পরবর্তী অর্ডার আসা পর্যন্ত যেটা আগে হবে সেই পর্যন্ত ছুটি। যদি এক সপ্তাহের ছুটি দেওয়ারই থাকে তাহলে পরবর্তী অর্ডারের উল্লেখ করার কী প্রয়োজন ছিল?
আমার মনে হচ্ছে, এই ছুটি দেওয়াটা শুধু তাপপ্রবাহের জন্য দেওয়া হয়নি বরং এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু রাজনৈতিক চাল। যেমন ডি.এ আন্দোলন
প্রায় মাসখানেক ধরে চলা সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ সহ আরও বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে আন্দোলন সরকারের কাছে বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্যপাল মাঝে মাঝে “moral” সাপোর্ট করে দিচ্ছে, আদালতও রাজ্যকে আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠক করার জন্য বলছে। তবে সরকারের কাছে একটা প্লাস পয়েন্ট আছে সেটা হল, সাধারণ জনগণের এই আন্দোলনে খুব একটি moral সাপোর্ট নেই এবং তারা খুব একটা পছন্দ করছে না এই আন্দোলন; যার পিছনে অনেক কারণ আছে তা নিয়ে অন্যদিন আলোচনা হবে। জনগণের অপছন্দকে আরেকটা উস্কে দিতে পারে এই ছুটি, জনগণকে বোঝানো হবে দেখো শিক্ষক/সরকারি কর্মীরা ঘরে বসে বসে বেতন পায় কিন্তু তারা আরও বেশি “বেতন চাইছে”। তারা এও বলতে পারবে যে দেখো, আমরা অন্য রাজ্যের থেকে অনেক বেশি ছুটি দিই কিন্তু তাতেও তাদের মন ভরছে না, মানে যা করেই হোক সাধারণ মানুষকে শিক্ষক ও সরকারি কর্মীদের জন্য আরও বিদ্বেষ তৈরি করার এই ছুটির প্রধান উদ্দেশ্য।
এছাড়া স্কুলে স্কুলে PM POSHAN প্রকল্প চলছে, স্কুলে স্কুলে মিড ডে মিলের সাথে ডিম এবং ফল দেওয়া হচ্ছে, এবং আর দু সপ্তাহেই তার শেষ। সেই প্রকল্পে ব্যাঘাত ঘটানোর একটা চাল হতে পারে। একে তো সরকারের প্রোপাগান্ডা বাহিনী মানুষকে বোঝায় যে মিড.ডে. মিল প্রকল্প “মাননীয়া” দেন। আর জনগণকেও বলিহারি ঘটে কি এইটুকু জ্ঞান বুদ্ধি নেই যে মিড ডে মিল এই সরকার আসার আগের থেকেই চলছে?
প্রাথমিক স্কুলগুলোতে ইতিমধ্যে মর্নিং শিফটের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, ছুটি না দিয়ে যদি, স্কুল গুলো একবেলা করে দিলেই তো হতো, মিড ডে মিল একটু আগে এনে সাড়ে আটটা ন’টার মধ্যে ছুটি দিলেই তো হতো, সূর্যের তাপ বৃষ্টির আগেই ছেলেমেয়েগুলো নিজের বাড়ি চলে যেতো, পড়াশুনো ‘শূন্য’ করার জায়গায় আট আনা করলেই তো হতো।
আসলে এই সরকারের কাছে চুরির টাকা আর ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি ছাড়া আর কোনো কিছুর মূল্য নেই, এই যেন গল্পের “নার্সিসিস্টিক অথরিটি”!