আরেক সমাপ্তি
৩১ ডিসেম্বর , ২০২০
আজ বছরের শেষ দিন। ২০২০ সালের তথা এই দশকের সমাপ্তিসুচক দিন আজ। এই বছররটা সত্যিই মানব ইতিহাসের অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে পরিচিত থাকবে। অনেকের মতে এই বছরটা অন্ধকারময় একটা বছর ছিল , কিন্তু আমার মতে অন্ধকার না থাকলে আলোর অস্তিত্ব বোঝা সম্ভব হয় না অতঃপর এই বছর আমি এবং আমার গ্রহের মানুষগুণ বহুত কিছু শিখলাম , জানলাম ও বুঝলাম।
প্রথম ভুল ধারনা যেটা মানুষের ছিল, আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খুবই উন্নত কিন্তু ২০২০ ও কোভিড-১৯ মহামারি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমরা পরিবেশের সামনে কত অসহায় এবং আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সবেমাত্র সদ্যজাত পর্যায়ে আছে ।
আরেকটা ভুল ধারনা ছিল, আমরা “প্রস্তুত” , এই ভুল ধারনা আমারও ছিল । আশা করেছিলাম যেহেতু আমরা (এখানে মানব সমাজের কথা বলছি , কারণ এই শতকের এটাই প্রথম এমন অতিমারি) পূর্বেও মহামারি/অতিমারি দেখেছি, তাই হয়তো আমাদের পূর্বপুরুষরা নিশ্চয়ই কোনো “এস্কেপ প্ল্যান” তৈরি করে রেখেছিল; কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হল।
অন্য দেশের কথা বলছি না , আমার নিজের দেশ এত ভুল ত্রুটি করেছে এই মহামারিতে তা ভাবাই যায় না। নেটফ্লিক্সের ‘ডার্ক’ সিরিজের একটা ডাইলগ মনে পড়ে গেল “They made every mistake in the book..” অর্থাৎ তারা সম্ভাব্য সমস্ত ভুলগুলি করেছিল। আমরা চেষ্টা করলে এবং সঠিক পরিকল্পনা করে অগ্রসর হলে আমার অনেক ভালো ভাবে করোনা পরিস্থিতিকে পরিচালনা করতে পারতাম। যদিও মনে হতে পারে সেইসময় এমন একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল যে সেই সময় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয় , কেন্দ্রীয় সরকারের দ্রুততার সাথে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটা বিশেষ কমিটি গঠন করা উচিত ছিল , যাতে সমস্ত স্থানের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া যেত। তবে কথায় আছে নানা মুনির নানা মত , সেটাও আবার এখানে অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারত। যাইহোক এই কিছুদিনে বেশ কিছু টিকা প্রায় প্রস্তুত হয়ে গেছে , আশা করব যাতে শীঘ্রই আমরা এই অতিমারির খেলা খতম করতে পারি।
অন্য দিকে , এবছরই আবার বিনোদন জগতের একটা অন্ধকার দিক জনগণের চোখে দৃশ্যমান হয়ে গেছে । মাদক , স্বজনপোষণ , যৌন শোষণ , সার্কাস , বাঁদর নাচ কি নেই এই নর্দমায়!
বেশ কিছু উজ্জ্বল , অনুজ্জ্বল এবং মেঘে ঢাকা নক্ষত্রদেরও হারিয়েছি।
যুদ্ধ দেখলাম। কুৎসিত রাজনীতি দেখলাম। দেখলাম শ্রমিকরা আজও রাষ্ট্রের কাছে কত নগণ্য। দেখলাম কৃষকও নিজের অধিকারের জন্য রাস্তায় নামতে পারে, অনশন করতে পারে। কত অগুনতি অবিশ্বাস্য নাচ-খেল দেখলাম তার আর হিসেব রাখাই হয়নি।
এছাড়া এই অতিমারিতে মানুষজনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ডিপ্রেসেনে বা বিষণ্ণতায় । এ বিষয়েও শীঘ্রয়ই বিস্তারিত লেখব।
এ তো গেলো হারানোর গল্প , এবার দেখি কি পেলাম -
এখনও যে মানব সমাজে সত্যিকারের স্বার্থহীন ও কর্তব্যপরায়ণ মানুষের অস্তিত্ব বর্তমান তা আবার প্রমাণিত হয়েছে । আমরা এও আভাস পেলাম যে ভবিষ্যতে “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” হবে শিল্প ও প্রযুক্তি জগতের নতুন ধাঁচ।
আমরা বুঝতে পারলাম এমন মহামারি/অতিমারির সামনে আমরা কতটা অসহায় । এর থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা “এস্কেপ প্ল্যান” তৈরি করে রাখা উচিত , যাতে তারাও আমাদের মত এমন অসুবিধার সম্মুখীন হলে তাদের প্রাথমিক কী কী করনীয়।
এছাড়া আমরা বুঝলাম , আমাদের জন্য ডাক্তার , নার্স ও পুলিশকর্মীরা কতটা প্রয়োজনীয়। তাদের জন্য এক সুস্থ কর্মস্থলের ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজনীয়।
জানি অনেক কিছু বাদ পড়ল। সেগুলো না হয় পরের বছর , বছরভর ধরে আলোচনা করা যাবে।
শিখলাম জানলাম বুঝলাম / জগতের কবিতা
~ পলাশ বাউরি